ফেসবুক কি সত্যিই মাইন্ড রিড করে নাকি শুধু স্মার্ট গেস করে?

November 21, 2025

ফেসবুক কি সত্যিই মাইন্ড রিড করে নাকি শুধু স্মার্ট গেস করে?

ধরেন, আপনি রাতে শুয়ে শুয়ে হুট করে কোনো পুরনো বন্ধুর কথা ভাবলেন। মনে পড়লো, স্কুলে একসাথে কত মজা করতেন, কত স্মৃতি। একটু আফসোসও হলো—অনেকদিন যোগাযোগ নাই। আর সকালেই যখন ফেসবুক খুললেন, প্রথমেই তার প্রোফাইল সাজেস্ট হয়ে এলো সামনে। তখন আপনার মাথায় প্রথম প্রশ্ন আসবেই “আরে! ফেসবুক কি আমার মাইন্ড রিড করছে নাকি?”

এমন অভিজ্ঞতা আমাদের প্রায় সবারই হয়েছে। কারো নাম মাথায় এলো, কয়েক মিনিট পরেই তার পোস্ট সামনে হাজির; কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে আলাপ হলো, পরক্ষণেই সেই প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন নিউজফিডে চলে এলো। পুরো ব্যাপারটাই এতটা কাকতালীয় (কিন্তু আসলে কাকতালীয় না) যে আমাদের মনে হয় ফেসবুক সত্যিই ব্রেইনের ভেতর ঢুকে গেছে।

রিয়েলিটি কী?

রিয়েলিটি হলো, ফেসবুক আসলে সরাসরি মাইন্ড রিড করে না। এর কোনো এক্স-রে মেশিন নাই যে আপনার চিন্তা স্ক্যান করছে। বরং এর অ্যালগরিদম এতটাই শক্তিশালী আর স্মার্ট যে এটা আপনার প্রতিদিনকার অনলাইন মুভমেন্ট, লাইক-কমেন্ট, সার্চ হিস্ট্রি, ওয়াচ টাইম, এমনকি লোকেশন আর ফ্রেন্ড কানেকশন সব কিছু মিলে একটা ডেটা-প্যাটার্ন বানায়। আর সেই প্যাটার্ন থেকে বের হয় একটা গেস—যেটা এত নিখুঁত হয় যে মনে হয় আপনার মাথার ভেতর ঢুকে পড়েছে।

ফেসবুক যেভাবে এই ম্যাজিক বানায়

প্রথমেই আসে ডেটা ট্র্যাকিং। আপনি কোন ভিডিওতে বেশি সময় থাকলেন, কোন পোস্টে লাইক দিলেন, কোন টপিকে কমেন্ট করলেন—এসব খুঁটিনাটি সবসময়ই রেকর্ড হয়। ধরেন আপনি বারবার ট্রাভেল ভিডিও দেখছেন, তখন ফেসবুক অটোমেটিক বুঝে নেবে আপনি ট্রাভেল কনটেন্টে ইন্টারেস্টেড।

এরপর আসে বিহেভিয়ারাল প্যাটার্ন। ফেসবুক শুধু এখন আপনি কী করছেন তাই দেখে না, বরং আপনার পুরনো অভ্যাস থেকেও ভবিষ্যতের গেস করে। যেমন আপনি যদি প্রতিদিন রাতে কুকিং ভিডিও দেখেন, তাহলে রাতে লগইন করলেই নিউজফিডে বেশি কুকিং কনটেন্ট সাজেস্ট করবে।

আরেকটা বড় ফ্যাক্টর হলো কুকিজ আর এক্সটার্নাল ডেটা। ধরেন, আপনি গুগলে গিয়ে সার্চ করলেন “রানিং শুজ”। কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে ঢুকতেই দেখলেন দারুণ কিছু রানিং শুজ-এর অ্যাড ঘুরে বেড়াচ্ছে। আসলে আপনার সার্চ হিস্ট্রির ডেটা কুকিজের মাধ্যমে ফেসবুক পর্যন্ত পৌঁছায়, আর সেটা সাথে সাথেই কাজে লাগায়।

সাথে যোগ হয় লোকেশন আর ফ্রেন্ড কানেকশন। ধরেন, আপনি এক জায়গায় নতুন চেক-ইন দিলেন বা কারো সাথে কমন লোকেশনে ছিলেন, তখন হুট করেই ফেসবুক “People You May Know” সাজেস্ট করে ফেলে। আবার আপনার বেশি ক্লোজ ফ্রেন্ডের সাথে যদি কোনো একাউন্টে কমন অ্যাক্টিভিটি থাকে, সেই প্রোফাইলও সামনে ভেসে ওঠে।

কেন মনে হয় মাইন্ড রিড করছে?

কারণ ব্যাপারটা এত পারফেক্ট হয় যে মনে হয় যেনো ফেসবুক আপনার মাথার ভিতর বসে আছে। আপনি যেই জিনিস ভাবলেন বা খুঁজলেন, সেটাই সামনে চলে আসে। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো এটা আসলে “ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট রিডিং”।

আপনার প্রতিটা অনলাইন মুভমেন্ট, সার্চ, লাইক, এমনকি স্ক্রল করার সময় পর্যন্ত একটা ডিজিটাল সিগন্যাল তৈরি করে। ফেসবুক সেই সিগন্যালগুলোকে একসাথে জোড়া দিয়ে একটা ছবির মতো বানায়। আর সেই ছবির ওপর ভিত্তি করেই অনুমান করে—আপনি পরের মুহূর্তে কী দেখতে চাইবেন।

একটা ছোট উদাহরণ

ভাবেন তো, আপনি যদি প্রতিদিন সকালে চা খান, তাহলে আপনার রুমমেট আন্দাজ করতে পারবে যে সকালে উঠে আপনি আবারো চা খাবেন। সে আপনার মাইন্ড রিড করছে না—বরং আপনার বিহেভিয়ারাল প্যাটার্ন দেখে গেস করছে। ফেসবুকও একদম সেইভাবেই কাজ করে, শুধু স্কেলে অনেক বড় এবং ডেটা-ড্রিভেন উপায়ে।

তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো—ফেসবুক আমাদের মাইন্ড রিড করে না। বরং আমাদের ডিজিটাল লাইফ থেকে অসংখ্য ছোট ছোট ক্লু জোগাড় করে একটা আল্ট্রা-স্মার্ট প্রেডিকশন বানায়। সেই প্রেডিকশন এত নিখুঁত হয় যে আমরা অবাক হয়ে যাই, আর মনে হয় সত্যিই মাইন্ড রিড করছে।

তবে একদিক থেকে এটা ম্যাজিকের মতো হলেও, আসলে সবকিছুই ডেটা-ড্রিভেন ক্যালকুলেশন। তাই যখন আবার হুট করে কারো প্রোফাইল সামনে চলে আসবে, তখন ভাববেন না ফেসবুক আপনার ব্রেইন পড়েছে—আসলে আপনার নিজের অনলাইন ফুটপ্রিন্টই ওকে বলে দিয়েছে, আপনার কী চাই।

Picture of osman

OSMAN GONI SAGOR

Web Designer And Developer
I design and redesign professional WordPress websites with 24/7 support — client satisfaction is my priority

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *